[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

ডুমুরিয়ায় হাই কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইটভাটা উচ্ছেদে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান,তিন লক্ষ টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সরদার বাদশা
নিজস্ব প্রতিনিধি খুলনা বিভাগ

মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদী তীরের সরকারি জায়গায় স্থাপিত ১৪টি অবৈধ ইটভাটাসহ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আজ (১৯ফেব্রুয়ারি) শনিবার উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মামুনুর রশীদ এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন।
এতে দুটি ইট ভাটাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানাসহ ৫টি ইট ভাটাকে নদীর জায়গায় স্থাপিত স্থাপনা ও স্তুপকৃত ইট ও মাটি আগামি তিন দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনে অভিযানে আটলিয়ার বরাতিয়া এলাকায় অবস্থিত শাহাজান জমাদ্দারের মালিকানাধীন নুর জাহান ব্রিক্স-২ ইট ভাটা লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং নদীর মাটি কেঁটে ইট প্রস্তুুত করার অপরাধে ২লাখ টাকা জরিমানা ধার্য্য অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডাদেশ, খর্ণিয়া এলাকায় সোহরাব হোসেনের মালিকানাধীন এ,এফ,এম,ব্রিক্স লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন।

এ ছাড়া উল্লেখিত ইট ভাটা দু’টিসহ গাজী এজাজ আহমেদ’র মালিকানাধীন সেতু ব্রিক্স,মোঃ ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এস,বি ব্রিক্স ও মোঃ সালেহ আখতার মাহির মালিকানাধীন কে,বি -২ ব্রিক্স কে নদীর জায়গায় স্থাপিত সকল স্থাপনা, স্তুুপকৃত ইট ও মাটি আগামী ৩ দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন, ডুমুরিয়া থানা পুলিশের এস,আই মোঃ হামিদুল ইসলাম,এস,আই মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান পুলিশ সদস্যবৃন্দ,উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা,
কর্মচারীবৃন্দ।
জানা যায়, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া,খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ভদ্রা ও হরি নদীর তীরের চর ভরাটিয়া জমি এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘ দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে দখল করে ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জনস্বার্থে সংগঠনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়ার আইনজীবী মনজেল মোরশেদ রীট পিটিশন দায়ের করেন। এক পর্যায়ে গত বছর ১৪ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট রীট পিটিশনটি শুনানীয়ান্তে পরবর্তি ৬০ দিনের মধ্যে ১৪টি ইটভাটার মধ্যে সরকারি জায়গায় স্হাপিত সকল অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বিচারপতি মোঃ মজিবর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্যার বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়া ইট ভাটা গুলো হচ্ছে-ডুমুরিয়া কুলবাড়িয়া, বরাতিয়া ও ভদ্রাদিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর তীরবর্তী এসবি ব্রিকস এর প্রতিষ্ঠানের মালিক ফজলুর রহমান। একই মৌজা ও নদীর তীরে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি’র মালিকানাধীন কে.পি.বি ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ও খর্ণিয়া মৌজার ভদ্রা তীরের এজাজ আহমেদের সেতু-১ ব্রিকস, শাহজাহান জমাদ্দারের নূরজাহান-১ ব্রিকস, হুমায়ুন কবির ভুলুর কে.বি-২ ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ভদ্রা নদী তীরে শাহজাহান জমাদ্দারের শান ব্রিকস, রানাই মৌজার ভদ্রা নদীর তীরে মোঃ সোবাহান সানার এফএম ব্রিকস, রানাই মৌজার হরি নদী তীরের জাহিদুল ইসলামের কে.বি ব্রিকস, ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের আল-মদিনা ব্রিকস, মশিউর রহমানের মেরি ব্রিকস, আব্দুল লতিফ জমাদ্দারের জে.বি ব্রিকস, আমিনুর রশিদের লুইন ব্রিকস, চহেড়া মৌজার হরি নদী তীরে গাজী আব্দুল হকের সেতু-৪ ব্রিকস এবং রুদাঘরা মৌজার হরি নদী তীরের গাজী ইমরানুল করিরের টিএম.বি ব্রিকস।
আরো জানা যায়, এর আগে হাইকোর্ট রুল জারি করে হরি ও ভদ্রা নদীর সীমানায় সিএস, আরএস রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে দখলদারদের তালিকাসহ ৯০দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খুলনা পওর বিভাগ-১, পাউবো খুলনাকে আহবায়ক এবং সার্ভেয়ার, খুলনা পওর বিভাগ-১, ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ারকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে যৌথভাবে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত। জেলা প্রশাসন গত অক্টোবরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে। আগামি কাল রোববার এবং আগামী ২২ ফেব্রুয়ারী রীট সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টে পরবর্তি শুনানীর দিন ধার্য্য রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইট ভাটা গুলোতে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার এবং আইন বাস্তবায়নে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।আগামী তিন দিনের মধ্যে সরকারি জমিতে থাকা সকল স্থাপনা ও স্তুুপকৃত ইট ও মাটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে ভাটা মালিকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *